Bay it

Socialcashking.com

Tuesday, August 28, 2012

মূলা

মূলা একটি পুষ্টিকর সবজি হলেও অনেকেই মূলা খতে পছন্দ করেন না। মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। এ দেশে মূলার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে অমৌসুমে মূলা আবাদের দিকে চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন। 
জমি ও মাটি
উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমিতে মূলা চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ মাটি মূলা চাষের জন্য ভাল। এটেল মাটিতে মূলার বাড় বাড়তি কম হয়। মূলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মূলার বাড় বাড়তি ভাল হয়।
জাত পরিচিতি
একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের মূলার মাধ্যমে এ দেশে উচ্চফলনশীল মূলার আবাদ শুরু হলেও এখন মূলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছে। আসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মূলা ১, বারি মূলা ২, বারি মূলা ৩, এভারেষ্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, বিএসবিডি ২১০১ এফ১, আনারকলি, দুর্বার, রকেট এফ১, সামার বেষ্ট এফ১, হ্যাভেন এফ১, মিনো আর্লি লং হোয়াই, বরকতি ৪০ এফ১, পাইলট এফ১, সিগমা ৪০ ইত্যাদি। নিচে মূলার বিভিন্ন জাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল-

বারিমূলা ১ (তাসাকিসান)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ ধবধবে সাদা, বেলুনাকৃতি, লম্বা ও বড়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ১ কেজি। দেশী মূলার মত অত ঝাঁঝ নেই। প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন।

বারিমূলা ২ (পিংকী)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ লালচে, নলাকৃতি, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫-৩০ সেন্টিমিটার, মধ্যমাকার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৯০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন।

বারিমূলা ৩ (দ্রুতি)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতি। পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো। মূলার অর্ধেক অংশ মাটির উপরে থাকে। প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৬০০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৪৫ টন। জীবনকাল ৪০-৪৫ দিন। রোগ পোকার আক্রমণ প্রতিরোধী। এ দেশের আবহাওয়ায় ভাল বীজ উৎপাদন করা যায়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১.২-১.৩ টন বীজ পাওয়া যায়।
এভারেষ্ট এফ১- সারা বছর চাষ করা যায়। একই জমিতে একই মৌসুমে ৩ বার চাষ করা যায়। সহজে ফুল আসেনা। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতি, ছোট আকারের, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন।

হোয়াইট প্রিন্স এফ১- মধ্য শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়।আগাম, দ্রুত বর্ধনশীল, ঝাঁঝহীন ও সুস্বাদু, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন।

মিনো আর্লি লং হোয়াইট- আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বুনতে হয় ও পৌষ ফাল্গুনে মূলা ওঠে। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলা লম্বা, সাদা, গ্রীস্মকালে ভাল হয়। প্রতিটি মূলার গড় ওজন ২৫০-৪০০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৫০ টন।
 বীজ হার ও বপন
আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মূলার বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণতঃ ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার সুবিধে হয়। সারিতে বুনতে হলে এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব দিতে হবে ২৫-৩০ সেমি.। 
 বীজ হার ও বপন
 সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার, টিএসপি ও অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিসি-তে ভাগে ভাগ করে বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে। মূলার বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দিলেই চলে।
সারের মাত্রা

সারের নাম       সারের পরিমাণ      
                    প্রতি শতকে                  প্রতি হেক্টরে         
ইউরিয়া              ১.২-১.৪ কেজি           ৩০০-৩৫০ কেজি  
টি এস পি            ১.০- ১.২ কেজি          ২৫০-৩০০ কেজি  
এমওপি              ০.৮৫-১.৪ কেজি        ২১৫-৩০০ কেজি   
গোবর               ৩২-৪০ কেজি           ৮-১০ টন 

 সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা

বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। ৩০ সেমি. দূরত্বে একটি করে চারা রাখা ভাল। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। প্রতি কিসি-র সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। 

রোগ ব্যবস্থাপনা
শাক সবজির পোকামাকড়


বাংলাদেশে শতাধিক রকমের ফসল জন্মে। এর মধ্যে সবজি জাতীয় ফসলই বেশি। সবজি ফসলের মধ্যে বেগুন, আলু, টমেটো, শিম, বরবটি, লাউ, কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, করলা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেড়ঁশ ইত্যাদি সবজি অন্যতম। রবি ও খরিপ উভয় মৌসুমে সবজি চাষ হয়ে থাকে। তবে বেগুনের মত বেশ কিছু সবজি সারা বছরই চাষ করা যায়। বিভিন্ন প্রকারের পোকামাকড় ও রোগ বালাই এ দেশে সবজি উৎপাদনে অন্যতম সমস্যা। এ দেশের উষ্ণভাবাপন্ন আর্দ্র আবহাওয়া সবজির রোগ ও পোকার আক্রমণের সহায়ক। এ পর্য বিভিন্ন শাক ও সবজি ফসলে প্রায় ১৮৩ প্রজাতির পোকা মাকড় ক্ষতি করে বলে জানা গেছে। তবেএসব পোকামাকড়ের মধ্যে ২০টি পোকামাকড়কে শাকসবজির প্রধানক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু পোকা আছে একটি নির্দ্দষ্ট সবজিকেই আক্রমণ করে, অন্য সবজির কোন ক্ষতি করেনা। যেমন গুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। আবার এমন অনেক পোকা আছে যারা একাধিক সবজিক্ষতি করে। এদের বহুভোজী পোকা বলে। যেমন কাটুই পোকা, জাব পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি। প্রতি বছর এসব পোকামাকড়ের কারণে প্রায় ১০-১৫% সবজি নষ্ট হয়।


মূলা পাতায় অল্টারনারিয়া পাতায় দাগ একটি সাধারণ সমস্যা। এছাড়া হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগও দেখা যায়।


কাটুই পোকা (Cut worm)
Agrotis ypsilon


যেসব সবজিতে আক্রমণ করে
বেগুন, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, মটরশুটি, মরিচ, কুমড়া ইত্যাদি।

পোকার পরিচিতি
কাটুই পোকা একটি বহুভোজী নিশাচর পোকা। পূর্ণবয়স্ক পোকার সামনের ডানা ধূসর বাদামী রঙের। তবে তার মধ্যে কালচে ছোপ ও ডোরা দাগ আছে। পিছনের ডানা ফ্যাকাশে বা সাদাটে এবং কিনারা বরাবর হালকা ঝালর বা পশম থাকে। পূর্ণ বয়স্ক পোকা ২৫ মিলিমিটার লম্বা। কীড়া ৪৬-৫৮ মিলিমিটার লম্বা। পূর্ণবর্ধিত কীড়ার রং মেটে থেকে বাদামী , লম্বালম্বিভাবে দেহের পিঠ বরাবর ও তার পাশে কালো রেখা থাকে। এরা স্পর্শ পেলে ইংরেজী “c” অক্ষরের ন্যায় কুন্ডলী পাকায় এবং দিনের বেলায় মাটিতে লুকিয়ে থাকে। পুত্তলি বাদামী রঙের, পিছনের দিকে কাঁটার মত অঙ্গ থাকে।

ক্ষতির লক্ষণ
কীড়া অবস্থায় এরা পাতা খেয়ে পূর্ণ বর্ধিত হওয়ার পর মাটির ফাটলে বা গর্তে লুকিয়ে থাকে। রাতে এরা চারা গাছের গোড়া মাটি বরাবর কেটে খায়। তীব্র আক্রমণে ক্ষেত প্রায় চারা শূন্য হয়ে পড়ে।

দমন ব্যবস্থাপনা
১.সকাল বেলায় সবজির ক্ষেত পরিদর্শন করে কাটা চারার নিকটবর্তী মাটি থেকে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলা।
২.আক্রমণ দেখা গেলে সেচ দেয়া। সেচের পানির সাথে কেরোসিন মিশিয়ে (২-৩ লিটার/হে:) দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৩.ক্ষেতে ডাল পুঁতে দেয়া এবং মাটি আলগা করে দেয়া।
৪.বিষ টোপ প্রয়োগ: ৯০০ গ্রাম গমের ভুষি অথবা ধানের কুঁড়া, ১০০ গ্রাম গুড় ও ২০০ গ্রাম পাদান ৫০এসপি কীটনাশক একত্রে মিশিয়ে ও দরকার মত পানি দিয়ে কাই বা মন্ড তৈরি করে তা আক্রান্ত জমিতে ছিটিয়ে দেয়া।
৫.আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় সেপ্র ক
রা।

 ফসল সংগ্রহ ও ফলন

মূলা শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই তুলতে হবে। অবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মূলা তুলে ফেলতে হবে। এতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকে। জাতভেদে হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৪০-৬০ টন।

No comments:

Post a Comment