Bay it

Socialcashking.com

Tuesday, August 28, 2012

ফুলকপি উৎপাদন প্রযুক্তি

শাক সবজির চাষ ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশে প্রায় ১০০ রকমের স্থানীয় ও বিদেশী শাক সবজি জন্মে। এ গুলোর মধ্যে ৯টি সবজিকে প্রধান সবজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হল বেগুন, আলু, টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়শ, মূলা ও বিভিন্ন রকমের কুমড়া গোত্রীয় সবজি। কুমড়া গোত্রীয় সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, পটল, করলা, কাকরোল, শসা ইত্যাদি সবজি অন্যতম। মোট সবজি চাষের জমির প্রায় ৮০% দখল করে রেখেছে এসব সবজি। মিষ্টি আলু, কচুর লতি, কচুমুখি, মানকচু ইত্যাদিও অন্যতম প্রধান সবজি। সবজির পাশাপাশি ডাটা, লালশাক, পালং শাক, পুঁইশাক ইত্যাদি প্রধান পাতাজাতীয় সবজি বা শাক। এ দেশে সারাবছর শাক সবজি ফলানো গেলেও পুরো বছরকে রবি ও খরিপ মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে। আলু, টমেটো, কপি, শিম রবি বা শীতের প্রধান সবজি। খরিপ বা গ্রীষ্মকালে বেশি হয় কুমড়াজাতীয় সবজি। তবে বেশি সবজি উৎপাদিত হয় শীত মৌসুমে। এত শাক সবজি ফলানোর পরও সেসব আমাদের সবজি চাহিদার মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ পূরণ করতে পারে। তই সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির এখনো অনেক সুযোগ রয়ে গেছে।
ফুলকপি

শীতের এক প্রধান জনপ্রিয় সবজি হল ফুলকপি। তরকারি বা কারি ও স্যুপ তৈরি করে, বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়। তবে শীতের সবজি হলেও ফুলকপি এখন গ্রীষ্মকালেও উৎপাদিত হচ্ছে।

পুষ্টি মূল্য ও ব্যবহার
ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফরাস খনিজ উপাদান আছে। এ ছাড়াএর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম, খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম ইত্যাদি।

উপযুক্ত জমি ও মাটি
ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভাল।

জাত পরিচিতি
এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাতও আছে। নিচে মৌসুমওয়ারী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতের নাম দেয়া হল-
সময়      জাতের নাম          বীজ বপনের সময় 
আগাম    অগ্রহায়নী, আর্লি পাটনা, আর্লি স্নোবল, সুপার স্নোবল, ট্রপিক্যাল স্নো ৫৫, সামার ডায়মন্ড এফ১, ম্যাজিক স্নো৫০দিন এফ১, হোয়াইট বিউটি, কে এস ৬০, আর্লি বোনাস, হিট মাস্টার, ক্যামেলিয়া, আর্লি মার্কেট এফ১, স্পেশাল ৪৫ এফ১, স্নো কুইন এফ১             শ্রাবণ- ভাদ্র          
মধ্যম     বারি ফুলকপি ১ (রূপা), চম্পাবতী ৬০দিন, চন্দ্রমুখী,  পৌষালী, রাক্ষুসী, স্নোবল এক্স, স্নোবল ওয়াই, হোয়াইট টপ, স্নো ওয়েভ, মোনালিসা এফ১, ম্যাজিক ৭০ এফ১, বিগটপ, চন্দ্রিমা ৬০ এফ১,    ভাদ্র- আশ্বিন        
নাবি       মাঘী বেনারসী, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন, এরফার্ট,            আশ্বিন-কার্তিক      
গ্রীষ্মকালীন            ম্যাজিক বল ৪৫দিন এফ ১, স্নো হোয়াইট,  রেইন মাষ্টার, স্নো গ্রেইস    ফাল্গুন-আষাঢ়        

বীজ হার
জমির পরিমাণ       বীজের পরিমাণ     
১ শতক   ২.০-২.৫ গ্রাম      
১ একর   ১৮০-২৪০ গ্রাম    
১ হেক্টর   ৪৫০-৬০০ গ্রাম    

চারা তৈরি
ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।

চারা রোপণ
বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরী হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

সারের মাত্রা

সারের নাম           সারের পরিমাণ     
            প্রতি শতকে          প্রতি হেক্টরে         
ইউরিয়া      ১.০-১.২ কেজি      ২৫০-৩০০ কেজি  
টি এস পি    ০.৬-০.৮ কেজি     ১৫০-২০০  কেজি  
এমওপি      ০.৮-১.০ কেজি      ২০০-২৫০ কেজি  
বোরাক্স      ২৮-৪০ গ্রাম         ৭.০-১০.০ কেজি   
গোবর      ৬০-৮০ কেজি       ১৫-২০ টন          

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিসি-র সার দিতে হবে ৫০ দিন পর। তবে পুরো বোরাক্স বা বোরন সার জমি তৈরির সময় দিয়ে দিলেও অসুবিধে নেই। আর সে সময় দিতে না পারলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় কিস-ও সার দেয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্পে করে দেয়া যায়। তবে সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস-র ভেঙ্গে দিয়ে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যা

ফুলকপি গাছের সারি মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। তবে ফুলকপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস'ায় চারদিক থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে ফুলের রঙ তথা ফুলকপির রঙ হলুদাভ হয়ে যাবে। 

পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
এদেশে ফুলকপির সবচে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।

রোগ ব্যবস্থাপনা
ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামী দাগ পড়ে ও কান্ড ফাঁপা হয়ে যায়।

ফসল তোলা ও ফলন
সাদা রঙ ও আঁটো সাঁটো থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২৫ টন, হেক্টরে ৩৫-৬০ টন।

No comments:

Post a Comment