Bay it

Socialcashking.com

Tuesday, August 28, 2012

রাম্বুটান

ভুমিকাঃ
রাম্বুটান (ইংরেজী নাম: Rambutan; বৈজ্ঞানিক নাম- Nephelium lappaceum) থাইল্যান্ডের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল যা বাংলাদেশের প্রোপটে বিদেশী ফল। যে সমস্ত বিদেশী ফল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষ করা হয় তার মধ্যে রাম্বুটান অন্যতম। এটি লিচু পরিবারের একটি ফল। বাহিরের অংশ Hairy থাকে বলে একে অনেকে Hairy লিচু, আবর অনেকে Queen of fruit বা ফলের রানীও বলে থাকে। ফলটি দেখতে লিচুর মতোই কিন্তু খোসার উপর খয়েরী রংয়ের লম্বা লম্বা লোম থাকে। এটি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে পানি ৮২.১০ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯০ গ্রাম, চর্বি ০.৩০ গ্রাম, গ্লুকোজ ২.৮০ গ্রাম, ফ্রুকটোজ ৩.০ গ্রাম, সুক্রোজ ৯.৯০ গ্রাম, নায়াসিন ০.৫০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মি. গ্রাম, আয়রন ০.১০-২.৫০ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ৭০ মি. গ্রাম, পটাসিয়াম ১৪০ মি. গ্রাম, সোডিয়াম ২ মি. গ্রাম, ম্যাগনিসিয়াম ১০ মি. গ্রাম, সহ ২৯৭ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে। রাম্বুটান প্রধানত; সতেজ ফল হিসাবে খাওয়া হয় এবং ফলের সিরাপ বা জুস তৈরীতেও প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হয়। ফ্রুট ট্রি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, উদ্যানতত্ত্ব খামার চত্ত্বরে ১৯৯১ সালে জার্মপ্লাজম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এ সেন্টারটিতে দেশী-বিদেশী ও ঔষধি বিভিন্ন জাতের চারা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, উৎপাদন ও সমপ্রসারণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশী ফল রাম্বুটান এর কিছু জাত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হতে এনে বাছাই এর মাধ্যমে সফল ভাবে ফল ধরানো সম্ভব হয়েছে।

ফলের বৈশিষ্টঃ
•    লম্বা      :  ৩.৫ - ৮ সে.মি
•    চওড়া     :  ২ - ৩.৫ সে.মি
•    ওজন     :   ১৫ - ৫০ গ্রাম
•    বাহ্যিক চেহারা :    নরম, লম্বা খয়েরী লোম যুক্ত।
•    বীজের দৈর্ঘ্য   :    ২.৫ - ৩.৫ সে.মি
•    বীজের প্রস্ত    :    ১ - ২.৫ সে.মি

জলবায়ু ও মাটি :
 রাম্বুটান উৎপাদনের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার। তবে শীতকালে মৃদু শীত (Mild winter) অথবা প্রায় সারা বছরই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিদ্যমান এমন স্থানে রাম্বুটান সবচেয়ে ভাল জন্মে। এ ফলের চাষ করার জন্য জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ অথবা কর্দমাক্ত দোঁয়াশ মাটি উত্তম।

বংশ বিস্তারঃ
মাতৃ গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য গুঁটি কলম ও জোড় কমল ও কুঁড়ি সংযোজনের মাধ্যমে বংশ বিস্তা করা হয়। তবে বীজের মাধ্যমে সহজেই বংশ বিস্তার করা যায় কিন্তু গুণাগুণ বজায় থাকে না।

রোপনঃ
৪ মি. দূরে ৩০ সে.মি. x ৩০ সে.মি. আকারে গর্ত করে ১০-১৫ কেজি পঁচা গোবর সার ২০ গ্রাম টি. এস.পি. ২০ গ্রাম পটাশ এবং ১০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে ১ মাস রেখে দিতে হবে। ১ মাস পরে গর্ত কোদাল দিয়ে ভাল ভাবে মাটি উপর-নীচ নাড়াচাড়া করে আগাছা পরিস্কার করে চারা রোপন করতে হবে।

সার প্রয়োগ
একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ২০-২৫ কেজি পঁচা গোবর সার, ২৫০ গ্রাম পঁচা খৈল, ৬০০ গ্রাম টি.এস.পি., ৬০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম  ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পরে সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

সেচ নিকাশঃ
গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রেখে রিং করে খরা মৌসুমে সেচ ও বর্ষা মৌসুমে ভালভাবে পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে ফুল আসার পরে প্রয়োজন মতো সেচ প্রয়োগ করা এ ফলের রজচন্য খুবই জরুরী।

অন্যান্য পরিচর্যাঃ
গাছের ভিতরে মরা ও প্রয়োজনে কিছু ডালপালা ছেঁটে দিতে হয়। গাছের ডাল মাটির সাথে লেগে থাকলে তা ঠেস দিয়ে তুলে দিতে হবে এবং ঝড়ে গাছ যেন ভেঁঙ্গে না যায় তার জন্য শক্ত খুঁটি বেধে দেওয়া প্রয়োজন।

পোকা-মাকড় ও রোগ বালাইঃ
রাম্বুটান গাছে পোকা-মাকড় তেমন একটা দেখা যায় না।  স্টিং বাগ, মাইট ও বার্কবোরার এর আক্রমণ মাঝে মাঝে দেখা যায়। স্টিং বাগ ও বার্কবোরার জন্য ডেসিস/ডাইমেক্রন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি. লিটার সেপ্র করতে হয় এবং মাইট এর জন্য ক্যালথেন সেপ্র করা হয়।

রোগ বালাইয়ের মধ্যে ডাউনি মিলভিউ, ফলের এনথ্রাকনোজ, ফলের কালো দাগ রোগ দেখা যায়। এসব রোগের জন্য ৭ দিন পর পর বোর্দোমিশ্রন বা ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪৫ গ্রাম ২/৩ বা সেপ্র করতে হয় ।

বাংলাদেশে রাম্বুটান ফলের চাষ সম্পর্কে ফ্রুট ট্রি ইমপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. রহিম  জানান - রাম্বুটান ফলের গাছ আমারা আমাদের জার্মপ্লাজম সেন্টারে ১৯৯৮ সালে প্রথম রোপন করি। ২০০৪ সালে আমারা প্রথম ফল পাই। এ পর্যন্ত গবেষণায় দেখা যায় যে, এ ফলটি আমাদের দেশের সব জেলায় সফলভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন ফলের চাহিদা মিটবে অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

No comments:

Post a Comment